সবথেকে বড় সংখ্যা
রামজীর থিওরি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গণিতবিদ গ্রাহাম ব্যবহার করলেন বিশাল একটি সংখ্যা। কত বড় এ সংখ্যাটি? ১ এর পর ১০০কোটিটা শূন্য? আমাদের জানা মহাবিশ্বের প্রতিটা পরমাণুতে একটি করে ৯ লিখলে যত বড় হবে তত বড়? না,এ সংখ্যাগুলো গ্রাহাম সংখ্যার কাছে শিশু,সংখ্যাটি এত বড় যে আপনার আমার পক্ষে কল্পনাও করা সম্ভব না এটা কত বড়,সংখ্যাটিতে কয়টা ডিজিট আছে সেটা খোদ গ্রাহামও জানেননা!!
মহাবিশ্বের সবথেকে বড় সংখ্যাটি কত? অর্থহীন একটি প্রশ্ন কারণ সবথেকে বড় সংখ্যার সাথে ১ যোগ করলে তার থেকেও বড় একটি সংখ্যা পাওয়া যাবে। তাই যখন সব থেকে বড় সংখ্যার কত বলা হয় তখন আসলে সবথেকে বড় যে সংখ্যাটি গণিতবিদরা ব্যবহার করেছেন,সব থেকে বড় যে সংখ্যাটি অর্থপূর্ণ তাকেই বোঝানো হয়। কত বড় সব থেকে বড় অর্থপূর্ণ সংখ্যাটি? এটা জানতে আমরা শুরু করবো কিছুটা পিছন থেকে।
১৯৩৮ সালে আমেরিকান গণিতবিদ এডওয়ারর্ড কাসনার তার ৯ বছর বয়সী তুখর ভাতিজা মিল্টনকে গণিত শিখাচ্ছিলেন। সংখ্যার বিশালত্ব নিয়ে তিনি কথা বলছিলেন। ছোট্ট মিল্টন সব থেকে বড় সংখ্যাটির নাম দিলো googol(গুগল) আর কাসনার ঠিক করলেন সংখ্যাটি ১ এর পর ১০০টি শূন্য লিখলে যত হয় তত।[১] এ থেকে সংখ্যাটির বিশালত্ব বোঝা না গেলে দেখুন সংখ্যাটি কত বড়:
10,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000.
তবে googol যে খুব অর্থপূর্ণ সংখ্যা তা নয়। কিন্তু বিশাল কোনো কিছুর সাথে তুলনা করার জন্য সংখ্যাটি কাজের,যেমন দাবার সম্ভাব্য চাল সংখ্যা। কেসনার সংখ্যাটি ব্যবহার করতেন অসীম এবং খুবই বড় কোনো সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য করার জন্য। ১ googol পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের মোট পরমাণুর সংখ্যার থেকেও বড়!
তবে মিল্টন এখানেই শেষ করেনি। সে যখন বুঝলো সবথেকে বড় সংখ্যা বলতে কিছু থাকতে পারেনা তখন সে googolplex(গুগলপ্লেক্স) নামের আরেকটি সংখ্যার নামকরণ করলো। তার মতে সংখ্যাটি হলো ১ এর পরে ক্লান্ত হবার আগ পর্যন্ত যতগুলো শূন্য লেখা যায় তত! তবে কেসনার সংখ্যাটিকে নির্দিষ্ট করে দিলেন,তিনি বললেন googolplex এর মান হলো ১ এর পর googol সংখ্যক শুণ্য লেখা হলে যতহবে তত,গাণিতিকভাবে ১০^(১০^১০০)।[১] এ সংখ্যাটি আসলে কতটা বড়? আসুন এবার googolplex দেখি:
10,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000……..
আমাকে থামতে হচ্ছে,সংখ্যাটি সব থেকে ছোটো ফন্টে লেখার মত যথেষ্ট জায়গাও মুক্তমনার সার্ভারে নেই,নেই পৃথিবীর কোনো সার্ভারে। এমনকি জায়গা নেই এ পৃথিবীতে বা মহাবিশ্বে। PBS এর একটা ডকুমেন্টারিতে কার্ল সেগান দেখান যে আমরা মহাবিশ্বের যে আকারের কথা জানি তাতে গুগলপ্লেক্স লেখা অসম্ভব,এমনকটি প্রতিটি শূন্য এক একটি পরমাণুর আকৃতির সমান হলেও,মহাবিশ্বে মৌলিক কণিকার সংখ্যা 2.5×10^89 যা গুগল প্লেক্সের থেকে ছোটো ! একটি মানুষ যদি প্রতি সেকেন্ডে ২টি ডিজিট লিখে তাহলে গুগলপ্লেক্স লিখতে সময় লাগে 1.51×10^92 বছর যা মহাবিশ্বের বয়সের থেকেও বেশি!
গুগলের মতো গুগলপ্লেক্সও খুব একটা কাজের সংখ্যা নয়। এটাও বিশাল বিশাল সব মানের সাথে তুলনা করতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া সত্যি কথাটা হলো গুগলপ্লেক্স খুবই খুবই খুবই ছোটো একটি সংখ্যা!!
এবার আমরা আসি অর্থপূর্ণ সংখ্যায়। অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন মহাবিশ্বের সংখ্যা ১টি নয়,বরং অসংখ্য। স্ট্যানফোর্ডের Andrei Linde এবং Vitaly Vanchurin এর গবেষণা অনুযায়ী মহাবিশ্বের সংখ্যা ১০^১০^১০^৭! সংখ্যাটি এত বড় যে মানুষের মস্তিষ্কের পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব না,মস্তিষ্ক সর্বোচ্চ ১০^১০^১৬টি ভিন্ন কম্বিনেশন সনাক্ত করতে পারে।
তবে সত্যিকারের দৈত্যাকার সংখ্যা খুজে পেতে আমাদের পদার্থবিজ্ঞান ছেড়ে যেতে হবে গণিতের জগতে। মৌলিক বা প্রাইম সংখ্যা কি আমরা সবাই জানি,মৌলিক সংখ্যাকে ১ এবং সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায়না,যেমন ২,৫,৭,১৩ ইত্যাদি। ইউলার প্রমাণ করেছেন মৌলিক সংখ্যার সংখ্যা অসীম। মৌলিক সংখ্যা নির্দিষ্ট কোনো প্যাটার্ন মেনে চলেনা,সংখ্যা বড় হতে থাকলে মৌলিক সংখ্যা পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। মৌলিক সংখ্যার গাণিতিক গুরুত্ব এবং রহস্যময়তার জন্য বহুশতক ধরে মানুষ চেষ্টা করছে বড় বড় সব মৌলিক সংখ্যা খুজে পাবার। ১৭শতকে ফরাসি গগণিতবিদ মেরিন মার্সেনইউলারে সূত্র কাছে লাগিয়ে বিশাল প্রাইম বের করার একটি পদ্ধতি বের করেন। একটি মার্সেন প্রাইম হলো 2^n-1 আকারের প্রাইম সংখ্যা,যেমন ৭=২^৩-১। মার্সেন প্রাইম সনাক্ত করা তুলনামূলক অনেক সহজ। ১৯৫২ সালে কম্পিউটার দিয়ে ১৫৭ ডিজিটের একটি প্রাইম বের করা হয় যা গুগল থেকে অনেক বড়। ২০০৮ সালে প্রায় ১৩মিলিয়ন ডিজিটের প্রাইম সনাক্ত করা হয়!![৭]এটাই এখন পর্যন্ত সনাক্ত করা সব থেকে বড় মৌলিক সংখ্যা। Great Internet Mersenne Prime Search নামক একটি প্রকল্প সবার জন্য উন্মুক্ত আছে,আপনিও নতুন প্রাইম সংখ্যা আবিষ্কার করে বিখ্যাত হয়ে যেতে পারেন!
গুগলপ্লেক্সকে লজ্জায় ফেলে দেয় Skewes’ Number। বিখ্যাত গণিতবিদ Carl Friedrich Gauss একটি ফাংশন আবিষ্কার করেছিলেন যা কোনো সংখ্যার নিচে কতগুলো প্রাইম আছে তা নির্ণয় করে। একে বলা হয় Logarithmic integral function। তবে ফাংশনটি একদম নির্ভুল ফলাফল দেয়না,১০০০০০০ এর নিচে এই ফাংশন 78,628 টি প্রাইম আছে বললেও আসলে আছে ৭৮,৪৯৮ টি। সংখ্যা যত বড় হতে থাকে তত ভুলের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং ফাংশনটি প্রাইমের সংখ্যা প্রকৃত সংখ্যার থেকে বেশি বলতে থাকে অর্থাত over-estimate করে। গণিতবিদরা ভাবলেন সংখ্যা বড় হতে হতে এই over-estimation বেড়ে অসীমের দিকে চলে যাবে।
১৯৪১ সালে জন ইডেন্সার প্রমাণ করলেন একসময় গাউসের ফাংশন একসময় over-estimate না করে under-estimate করা শুরু করবে,তারমানে প্রকৃত প্রাইম সংখ্যার থেকে কম পাওয়া যাবে ফাংশনে। তারপর আবার একসময় over-estimate করবে এবং অসীম সংখ্যকবার এরকম হতে থাকবে।

খোজ শুরু হলো সবথেকে ছোট মান x এর যার জন্য গাউসের ফাংশনের মানের থেকে প্রাইমের সংখ্যা বেশ হবে। রিম্যান হাইপোথিসিস কে সত্যি ধরে ১৯৩৩ সালে Stanley Skewes প্রমাণ করলেন x সংখ্যাটি ১০^১০^১০^৩৪ এর বড় হতে পারবেনা। এটাই Skewes’ Number।[৬]গণিতবিদ হার্ডি বলেছিলেন:
যদি মহাবিশ্বের সকাল কণিকা নিয়ে দাবা খেলা হয় এবং প্রতিটি চালে যেকোনো দুটি কণিকার অবস্থান অদলবদল করা হয় এবং কণিকাগুলো শুরুর অবস্থা ৩বার ফিরে আসলে খেলা শেষ হয় তাহলে যতরকমভাবে খেলাটি শেষ হওয়া সম্ভব সেটা Skewes’ Number এর কাছাকাছি হবে।[১]
রিম্যান হাইপোথিসিস যদি মিথ্যা হয় তাহলে সংখ্যাটি বেড়ে দাড়াবে ১০^১০^১০^৩।[৬] পরবর্তীতে অবশ্য এই উর্ধ্বসীমা আরো অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
এবার প্রস্তুত হন এখন পর্যন্ত গাণিতিক প্রমাণে ব্যবহৃত হওয়া সবথেকে বড় সংখ্যার গল্প শোনার জন্য। বাজি ধরে বলা যায় এ সংখ্যার হিসাব দেখে আপনার মাথা ঘুরে যাবে।

গণিতবিদ রোনাল্ড গ্রাহাম,বিচ্ছিন্ন গণিতের পথিকৃতদের একজন। রামজীর গ্রাফ কালারিং এর একটা সমস্যা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি ব্যবহার করলেন গ্রাহাম সংখ্যা। কত বড় এ সংখ্যাটি?
সংখ্যাটি এত বড় যে পাওয়ার বা ঘাত চিহ্ন ^ দিয়ে লিখলেও () মহাবিশ্বে জায়গা হবেনা! সংখ্যাটিতে কয়টা ডিজিট আছে সেটা লেখার মতো জায়গাও নাই এ মহাবিশ্বে। আরেক জীবন্ত কিংবদন্তী নুথের আবিষ্কৃত up-arrow notation দিয়ে এই সংখ্যাকে প্রকাশ করা হয়।
একটু ধৈর্য ধরে দেখুন, এই পদ্ধতিতে:
3↑3 = 3^3 = 27
এবং 3↑↑3 = 3↑(3↑3) = 7625597484987
তাহলে 3↑↑↑3 = 3↑↑3↑↑3 = 3↑↑7625597484987
তারমানে 3^3^3^3………^3^3 মোট 7625597484987 টি ৩। এখনই সংখ্যাটি মহাবিশ্বে পরমাণুর সংখ্যার থেকে বড়।
এখন
3↑↑↑↑3 = 3↑↑↑3↑↑↑3 = 3↑↑↑(3↑↑7625597484987)
এই সংখ্যাটি কত বড় কল্পনা করাও সম্ভব নয়,অবিশ্বাস্য রকমের বড় এই সংখ্যাটি। আমরা দেখেছি ৩টা ↑ চিহ্ন থাকলেই সংখ্যা কতখানি বড় হয়ে যায়, 3↑↑↑(3↑↑7625597484987) সংখ্যাটির আকার অনুধাবন করা মানব মস্তিষ্কের পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে শেষ হয়নি,এটা হলো উপরের ছবির রিলেশনে g1 এর মান। এরপর ঠিক এভাবে বের করতে হবে g2 এর মান। এখন সংখ্যাটি কত বড় হবে?? g2 তে g1 সংখ্যক ↑ চিহ্ন থাকবে। g3 তে থাকবে g2 সংখ্যক!
অবিশ্বাস্যভাবে গ্রাহামের সংখ্যার মান হলো g64!! পুরাই মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতো একটা সংখ্যা। গুগলপ্লেক্স,skew’s number এটার কাছে নিতান্তই শিশু। আর গ্রাহাম এই সংখ্যা ব্যবহার করেছেন গাণিতিক প্রমাণে,এই তথ্যটাও মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতো। সুপরিচিত ওয়েবসাইট ডক্টর ম্যাথে লিখেছে:
Nothing in the universe could possibly be so large; only in mathematics can we even
speak of such numbers. So you shouldn’t expect to be able to imagine such a large number
গ্রাহামের সংখ্যা এত বড় যে কেও জানেনা সংখ্যাটিতে ঠিক কতটি ডিজিট আছে,গ্রাহাম নিজেওনা। তবে ডানপাশের কিছু ডিজিট নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে,সবশেষ ডিজিটটি হলো ৭।
আরো বড় সংখ্যা আছে কি? গ্রাহামের সংখ্যার সাথে ১ যোগ করে আরো বড় সংখ্যা তৈরি করাই যায় তবে অর্থপূর্ণ সংখ্যার মধ্যে এটাই সর্বশেষ।
মহাবিশ্বের সবথেকে বড় সংখ্যাটি কত? অর্থহীন একটি প্রশ্ন কারণ সবথেকে বড় সংখ্যার সাথে ১ যোগ করলে তার থেকেও বড় একটি সংখ্যা পাওয়া যাবে। তাই যখন সব থেকে বড় সংখ্যার কত বলা হয় তখন আসলে সবথেকে বড় যে সংখ্যাটি গণিতবিদরা ব্যবহার করেছেন,সব থেকে বড় যে সংখ্যাটি অর্থপূর্ণ তাকেই বোঝানো হয়। কত বড় সব থেকে বড় অর্থপূর্ণ সংখ্যাটি? এটা জানতে আমরা শুরু করবো কিছুটা পিছন থেকে।
১৯৩৮ সালে আমেরিকান গণিতবিদ এডওয়ারর্ড কাসনার তার ৯ বছর বয়সী তুখর ভাতিজা মিল্টনকে গণিত শিখাচ্ছিলেন। সংখ্যার বিশালত্ব নিয়ে তিনি কথা বলছিলেন। ছোট্ট মিল্টন সব থেকে বড় সংখ্যাটির নাম দিলো googol(গুগল) আর কাসনার ঠিক করলেন সংখ্যাটি ১ এর পর ১০০টি শূন্য লিখলে যত হয় তত।[১] এ থেকে সংখ্যাটির বিশালত্ব বোঝা না গেলে দেখুন সংখ্যাটি কত বড়:
10,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000.
তবে googol যে খুব অর্থপূর্ণ সংখ্যা তা নয়। কিন্তু বিশাল কোনো কিছুর সাথে তুলনা করার জন্য সংখ্যাটি কাজের,যেমন দাবার সম্ভাব্য চাল সংখ্যা। কেসনার সংখ্যাটি ব্যবহার করতেন অসীম এবং খুবই বড় কোনো সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য করার জন্য। ১ googol পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের মোট পরমাণুর সংখ্যার থেকেও বড়!
তবে মিল্টন এখানেই শেষ করেনি। সে যখন বুঝলো সবথেকে বড় সংখ্যা বলতে কিছু থাকতে পারেনা তখন সে googolplex(গুগলপ্লেক্স) নামের আরেকটি সংখ্যার নামকরণ করলো। তার মতে সংখ্যাটি হলো ১ এর পরে ক্লান্ত হবার আগ পর্যন্ত যতগুলো শূন্য লেখা যায় তত! তবে কেসনার সংখ্যাটিকে নির্দিষ্ট করে দিলেন,তিনি বললেন googolplex এর মান হলো ১ এর পর googol সংখ্যক শুণ্য লেখা হলে যতহবে তত,গাণিতিকভাবে ১০^(১০^১০০)।[১] এ সংখ্যাটি আসলে কতটা বড়? আসুন এবার googolplex দেখি:
10,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000……..
আমাকে থামতে হচ্ছে,সংখ্যাটি সব থেকে ছোটো ফন্টে লেখার মত যথেষ্ট জায়গাও মুক্তমনার সার্ভারে নেই,নেই পৃথিবীর কোনো সার্ভারে। এমনকি জায়গা নেই এ পৃথিবীতে বা মহাবিশ্বে। PBS এর একটা ডকুমেন্টারিতে কার্ল সেগান দেখান যে আমরা মহাবিশ্বের যে আকারের কথা জানি তাতে গুগলপ্লেক্স লেখা অসম্ভব,এমনকটি প্রতিটি শূন্য এক একটি পরমাণুর আকৃতির সমান হলেও,মহাবিশ্বে মৌলিক কণিকার সংখ্যা 2.5×10^89 যা গুগল প্লেক্সের থেকে ছোটো ! একটি মানুষ যদি প্রতি সেকেন্ডে ২টি ডিজিট লিখে তাহলে গুগলপ্লেক্স লিখতে সময় লাগে 1.51×10^92 বছর যা মহাবিশ্বের বয়সের থেকেও বেশি!
গুগলের মতো গুগলপ্লেক্সও খুব একটা কাজের সংখ্যা নয়। এটাও বিশাল বিশাল সব মানের সাথে তুলনা করতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া সত্যি কথাটা হলো গুগলপ্লেক্স খুবই খুবই খুবই ছোটো একটি সংখ্যা!!
এবার আমরা আসি অর্থপূর্ণ সংখ্যায়। অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন মহাবিশ্বের সংখ্যা ১টি নয়,বরং অসংখ্য। স্ট্যানফোর্ডের Andrei Linde এবং Vitaly Vanchurin এর গবেষণা অনুযায়ী মহাবিশ্বের সংখ্যা ১০^১০^১০^৭! সংখ্যাটি এত বড় যে মানুষের মস্তিষ্কের পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব না,মস্তিষ্ক সর্বোচ্চ ১০^১০^১৬টি ভিন্ন কম্বিনেশন সনাক্ত করতে পারে।
তবে সত্যিকারের দৈত্যাকার সংখ্যা খুজে পেতে আমাদের পদার্থবিজ্ঞান ছেড়ে যেতে হবে গণিতের জগতে। মৌলিক বা প্রাইম সংখ্যা কি আমরা সবাই জানি,মৌলিক সংখ্যাকে ১ এবং সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায়না,যেমন ২,৫,৭,১৩ ইত্যাদি। ইউলার প্রমাণ করেছেন মৌলিক সংখ্যার সংখ্যা অসীম। মৌলিক সংখ্যা নির্দিষ্ট কোনো প্যাটার্ন মেনে চলেনা,সংখ্যা বড় হতে থাকলে মৌলিক সংখ্যা পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। মৌলিক সংখ্যার গাণিতিক গুরুত্ব এবং রহস্যময়তার জন্য বহুশতক ধরে মানুষ চেষ্টা করছে বড় বড় সব মৌলিক সংখ্যা খুজে পাবার। ১৭শতকে ফরাসি গগণিতবিদ মেরিন মার্সেনইউলারে সূত্র কাছে লাগিয়ে বিশাল প্রাইম বের করার একটি পদ্ধতি বের করেন। একটি মার্সেন প্রাইম হলো 2^n-1 আকারের প্রাইম সংখ্যা,যেমন ৭=২^৩-১। মার্সেন প্রাইম সনাক্ত করা তুলনামূলক অনেক সহজ। ১৯৫২ সালে কম্পিউটার দিয়ে ১৫৭ ডিজিটের একটি প্রাইম বের করা হয় যা গুগল থেকে অনেক বড়। ২০০৮ সালে প্রায় ১৩মিলিয়ন ডিজিটের প্রাইম সনাক্ত করা হয়!![৭]এটাই এখন পর্যন্ত সনাক্ত করা সব থেকে বড় মৌলিক সংখ্যা। Great Internet Mersenne Prime Search নামক একটি প্রকল্প সবার জন্য উন্মুক্ত আছে,আপনিও নতুন প্রাইম সংখ্যা আবিষ্কার করে বিখ্যাত হয়ে যেতে পারেন!
গুগলপ্লেক্সকে লজ্জায় ফেলে দেয় Skewes’ Number। বিখ্যাত গণিতবিদ Carl Friedrich Gauss একটি ফাংশন আবিষ্কার করেছিলেন যা কোনো সংখ্যার নিচে কতগুলো প্রাইম আছে তা নির্ণয় করে। একে বলা হয় Logarithmic integral function। তবে ফাংশনটি একদম নির্ভুল ফলাফল দেয়না,১০০০০০০ এর নিচে এই ফাংশন 78,628 টি প্রাইম আছে বললেও আসলে আছে ৭৮,৪৯৮ টি। সংখ্যা যত বড় হতে থাকে তত ভুলের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং ফাংশনটি প্রাইমের সংখ্যা প্রকৃত সংখ্যার থেকে বেশি বলতে থাকে অর্থাত over-estimate করে। গণিতবিদরা ভাবলেন সংখ্যা বড় হতে হতে এই over-estimation বেড়ে অসীমের দিকে চলে যাবে।
১৯৪১ সালে জন ইডেন্সার প্রমাণ করলেন একসময় গাউসের ফাংশন একসময় over-estimate না করে under-estimate করা শুরু করবে,তারমানে প্রকৃত প্রাইম সংখ্যার থেকে কম পাওয়া যাবে ফাংশনে। তারপর আবার একসময় over-estimate করবে এবং অসীম সংখ্যকবার এরকম হতে থাকবে।

খোজ শুরু হলো সবথেকে ছোট মান x এর যার জন্য গাউসের ফাংশনের মানের থেকে প্রাইমের সংখ্যা বেশ হবে। রিম্যান হাইপোথিসিস কে সত্যি ধরে ১৯৩৩ সালে Stanley Skewes প্রমাণ করলেন x সংখ্যাটি ১০^১০^১০^৩৪ এর বড় হতে পারবেনা। এটাই Skewes’ Number।[৬]গণিতবিদ হার্ডি বলেছিলেন:
যদি মহাবিশ্বের সকাল কণিকা নিয়ে দাবা খেলা হয় এবং প্রতিটি চালে যেকোনো দুটি কণিকার অবস্থান অদলবদল করা হয় এবং কণিকাগুলো শুরুর অবস্থা ৩বার ফিরে আসলে খেলা শেষ হয় তাহলে যতরকমভাবে খেলাটি শেষ হওয়া সম্ভব সেটা Skewes’ Number এর কাছাকাছি হবে।[১]
রিম্যান হাইপোথিসিস যদি মিথ্যা হয় তাহলে সংখ্যাটি বেড়ে দাড়াবে ১০^১০^১০^৩।[৬] পরবর্তীতে অবশ্য এই উর্ধ্বসীমা আরো অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
এবার প্রস্তুত হন এখন পর্যন্ত গাণিতিক প্রমাণে ব্যবহৃত হওয়া সবথেকে বড় সংখ্যার গল্প শোনার জন্য। বাজি ধরে বলা যায় এ সংখ্যার হিসাব দেখে আপনার মাথা ঘুরে যাবে।

গণিতবিদ রোনাল্ড গ্রাহাম,বিচ্ছিন্ন গণিতের পথিকৃতদের একজন। রামজীর গ্রাফ কালারিং এর একটা সমস্যা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি ব্যবহার করলেন গ্রাহাম সংখ্যা। কত বড় এ সংখ্যাটি?
সংখ্যাটি এত বড় যে পাওয়ার বা ঘাত চিহ্ন ^ দিয়ে লিখলেও () মহাবিশ্বে জায়গা হবেনা! সংখ্যাটিতে কয়টা ডিজিট আছে সেটা লেখার মতো জায়গাও নাই এ মহাবিশ্বে। আরেক জীবন্ত কিংবদন্তী নুথের আবিষ্কৃত up-arrow notation দিয়ে এই সংখ্যাকে প্রকাশ করা হয়।
একটু ধৈর্য ধরে দেখুন, এই পদ্ধতিতে:
3↑3 = 3^3 = 27
এবং 3↑↑3 = 3↑(3↑3) = 7625597484987
তাহলে 3↑↑↑3 = 3↑↑3↑↑3 = 3↑↑7625597484987
তারমানে 3^3^3^3………^3^3 মোট 7625597484987 টি ৩। এখনই সংখ্যাটি মহাবিশ্বে পরমাণুর সংখ্যার থেকে বড়।
এখন
3↑↑↑↑3 = 3↑↑↑3↑↑↑3 = 3↑↑↑(3↑↑7625597484987)
এই সংখ্যাটি কত বড় কল্পনা করাও সম্ভব নয়,অবিশ্বাস্য রকমের বড় এই সংখ্যাটি। আমরা দেখেছি ৩টা ↑ চিহ্ন থাকলেই সংখ্যা কতখানি বড় হয়ে যায়, 3↑↑↑(3↑↑7625597484987) সংখ্যাটির আকার অনুধাবন করা মানব মস্তিষ্কের পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে শেষ হয়নি,এটা হলো উপরের ছবির রিলেশনে g1 এর মান। এরপর ঠিক এভাবে বের করতে হবে g2 এর মান। এখন সংখ্যাটি কত বড় হবে?? g2 তে g1 সংখ্যক ↑ চিহ্ন থাকবে। g3 তে থাকবে g2 সংখ্যক!
অবিশ্বাস্যভাবে গ্রাহামের সংখ্যার মান হলো g64!! পুরাই মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতো একটা সংখ্যা। গুগলপ্লেক্স,skew’s number এটার কাছে নিতান্তই শিশু। আর গ্রাহাম এই সংখ্যা ব্যবহার করেছেন গাণিতিক প্রমাণে,এই তথ্যটাও মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতো। সুপরিচিত ওয়েবসাইট ডক্টর ম্যাথে লিখেছে:
Nothing in the universe could possibly be so large; only in mathematics can we even
speak of such numbers. So you shouldn’t expect to be able to imagine such a large number
গ্রাহামের সংখ্যা এত বড় যে কেও জানেনা সংখ্যাটিতে ঠিক কতটি ডিজিট আছে,গ্রাহাম নিজেওনা। তবে ডানপাশের কিছু ডিজিট নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে,সবশেষ ডিজিটটি হলো ৭।
আরো বড় সংখ্যা আছে কি? গ্রাহামের সংখ্যার সাথে ১ যোগ করে আরো বড় সংখ্যা তৈরি করাই যায় তবে অর্থপূর্ণ সংখ্যার মধ্যে এটাই সর্বশেষ।
No comments