বাটারফ্লাই ইফেক্ট &(War of the cow)


বিজ্ঞানে একটি মজার থিওরি আছে! নাম বাটারফ্লাই ইফেক্ট। তা হল -ছোট একটি ঘটনা ঘটলে সেটার বড় প্রভাব থাকতে পারে! যেমন ধরা যাক - বাংলাদেশে কোন এক প্রজাপতি পাখা ঝাপটাল!ফলে আবহাওয়ায় তার যে ছোট্ট প্রভাব পড়বে সেটাই অনেক চেইন রিএকশানের মাধ্যমে পরবর্তীতে টেক্সাসে বড় কোন ঝড়ের সৃষ্টি করতে পারে।

আবহাওয়া বিজ্ঞানে এটা বেশ কমন একটা টার্ম। এডওয়ার্ড লরেঞ্জ নামে এমআইটির এক ভদ্রলোক তার পুরোনো এক কম্পিউটারে ওয়েদার প্যাটার্ন হিসাব করতেছিলেন। তিনি বরাবরই ইনপুট ডাটা গুলো ছয় দশমিক পর্যন্ত নেন। কিন্তু সেদিন আলসেমির কারনে তিন দশমিক পর্যন্ত নিলেন। ফলাফল দেখে তার চোখ কপালে উঠে গেল।সামান্য বাকী দশমিকের তিন ঘরের পরের তিন ঘর না নেয়াতে পুরো হিসাবটাই উলটে গেল!তিনি ভাবলেন আরে আমি তো সামান্য পরিবর্তন করলাম!! তাহলে তো ফলাফলে সামান্য পরিবর্তন আসা উচিত!!এটাই লজিক্যাল!!কিন্তু ঘটল উল্টোটা!

সোজা কথায়, কোন ঘটনার সামান্য একটি দিক পরিবর্তন করে দিলে পুরো ফলাফলই পাল্টে যেতে পারে! বাটারফ্লাই ইফেক্ট অনেকটা law of gravity এর মতো ! এটা law of sensitive dependence upon initial conditions!!!

ব্যাপারটা শুধুমাত্র যে বাটারফ্লাই এর জন্য প্রযোজ্য তেমন না এটা মানুষ সহ যেকোন মুভিং ম্যাটার এর জন্য প্রযোজ্য!!!

উদাহরন:

War of the cow

সালটা তখন ১২৭৫। বেলজিয়ামের জ্যালেট রাজ্যের এক কৃষক পাশের রাজ্য কনড্রজ থেকে একটা গরু চুরি করে। তবে তার কপাল মন্দ, বাজারে বিক্রি করতে যেয়ে ধরা পড়ে সে। তখনকার কনড্রজ রাজ্যের হর্তাকর্তারা তাকে প্রস্তাব দেয় যে যদি সে গরুটি তার মালিকের কাছে ফেরত দেয় তবে তারা তাকে ক্ষমা করে দেবে। যে কথা সেই কাজ, কিন্তু গরুটি ফেরত দেবা মাত্রই তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়। ব্যাপারটাকে সহজভাবে নেননি জ্যালেট রাজ্যের রাজা। এই ঘটনাতে তিনি মারাত্মক চটে যান, যার ফলাফল হয় ভয়ানক। যে অপরাধের সাজা কয়েক মাসের জেল হতে পারতো সেই সামান্য অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড! তিনি এই ঘটনাকে জ্যালেটের রাজা তার আত্মসম্মান এর ওপর চরম আঘাত মনে করে সাথে সাথেই তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেন।

কনড্রজের রাজাকে এই অপমানের উপযুক্ত শাস্তি দেবার জন্য শুরু হওয়া এই যুদ্ধের ফল হয় সুদূরপ্রসারী। সামান্য গরু চুরি নিয়ে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ চলে প্রায় তিন বছর। তাদের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের রাজ্যগুলোর মধ্যেও। দীর্ঘমেয়াদি এই যুদ্ধে চারটি রাজ্যসহ শুধুমাত্র কনড্রজ রাজ্যেরই ১৫,০০০ মানুষ ও ৬০ টি গ্রাম ধংস হয়ে যায়। যুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ সৈন্য নিহত হয়। বেলজিয়ামের ইতিহাসে এই যুদ্ধ “The Guerre de la Vache” বা “War of the cow” নামে পরিচিত। সামান্য গরু চুরির ওপর নির্ভর করে রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধ হাস্যকর মনে হলেও এটি বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর একটি চমৎকার উদাহরণ।


১.আচ্ছা ধরুন না যদি গ্যাব্রিলো প্রিন্সিপ এর গুলি Archduke Franz Ferdinand( Austria) এর গায়ে না লাগত!! এই গুপ্তহত্য না হলে অস্ট্রিয়া -হাঙ্গেরি সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ঘোষনা করত না ফলে জার্মানি রাশিয়ার বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষনা করত না, ইউকে জার্মানিকেও কিছু বলত না !!

বলা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হত না!!হয়ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও না!! অনেকে বলে থাকেন এই ঘটনা না ঘটলেও যুদ্ধ অবধারিত ছিল, না হয়ে উপায় ছিল না !! হ্যা হয়ত যুদ্ধটা হত কিন্তু সেভাবে হত না!!সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে Archduke এর গাড়ির ড্রাইভার ভুল করেই সেদিন অই রাস্তায় মোড় নেয়( লক্ষ্য করুন সামান্য ভুল)!!

২.১৯১৮ সাল!! ফ্রান্সের এক গ্রামে একজন ব্রিটিশ সেনা হিটলারকে পিটিয়ে জখম করে !! তাকে গুলি করার কথাও ছিল কিন্তু কি কারনে যেন ছেড়ে দেন !! কেমন হতো যদি শুধু একটা বুলেটের খরচ করতেন!! হিটলার দিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ড্রাইভিং ফোরস হিসেবেও কাজ করত না ,ষাট লক্ষ ইহুদিও মরত না!!

৩.হিটলার Viena academy of fine arts তে এক্সাম দিছিলেন !! কেমন হইত হিটলার যদি রিজেক্টেড না হতো??


আচ্ছা আমাদের দৈনন্দিন ঘটনাই ধরি:

৪.আপনি আপনার যে ক্লাসমেটকে ‘এই হাতি অথবা কালা’ বলে ডেকে খুব আনন্দ পান, আপনার কি কখনো মনে হয়েছে যে আপনার এই কয়েক সেকেন্ডের বিচ্ছিরি আনন্দটি আসলে বাসায় ফিরে মেয়েটির আয়নায় নিজের শরীরের গড়নের হতাশায় কান্নার কারন হতে পারে?

কখনো কখনো খুব ছোট একটি কথা, সামান্য একটু উৎসাহ একটি মানুষের জীবন একদম বদলে দিতে পারে!

তাই সবসময় চেষ্টা করা উচিত মানুষকে উৎসাহ দেওয়ার, তার গুণটির প্রশংসা করার।

রাস্তা-ঘাটে, বাজারে, যানবাহনে মানুষের সাথে সুন্দর করে হেসে কথা বলার, আপনার এই ছোট্ট সুন্দর ব্যবহারটুকু সেই মানুষটির মন একদম ভাল করে দিতে পারে আপনি জানতেও পারবেন না!

আর আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আপনার লাইফ কিছুই না , আপনি যা করেন তা অর্থহীন, তাহলে আপনি ভুল ভেবেছেন, কারন

Everything you do matters!!


২০০৪ সালে 'দ্য বাটারফ্লাই ইফেক্ট' নামের একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এরিক রেস ও জে ম্যাকে গ্রাবার পরিচালিত এই ছবিতে অতীতের কিছু ঘটনা পাল্টে দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকে। বাটারফ্লাই ইফেক্টের মতোই সমাজে আরও কিছু ইফেক্ট দৃশ্যমান হচ্ছে। কোনো একটি ঘটনা ঘটলে কাছাকাছি সময়ে একই ধরনের অনেকগুলো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। মিডিয়া ইফেক্ট, কালটিভেশন থিওরি, সোশ্যাল অ্যাকশন থিওরিসহ নানা তত্ত্বের মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তির পেছনে কোনো ধরনের মনস্তত্ত্ব কাজ করে তা নিয়েও গবেষণা চলছে।

ঘটনার পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের ঘটনাই রয়েছে। অনুকরণপ্রবণতা থেকে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে বলে কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানী বলে থাকেন। কিছু ঘটনা মানুষের প্রতিবাদী সত্তাকে উস্কে দেয়। ফলে একই রকম প্রতিবাদী ঘটনা বিভিন্ন জায়গায় দৃশ্যমান হয়। অন্যদিকে কোনো কোনো ঘটনা মানুষের অপরাধী মনকে জাগিয়ে দিতে পারে। ফলে একই কৌশলের প্রয়োগে অপরাধ সংগঠনের দিকে মনোযোগী হতে পারে ব্যক্তিটি।

বিনিয়োগকারীদের পাওনা ফিরিয়ে না দেওয়ায় ভারতের সাহারা গ্রুপের প্রধান সুব্রত রায়ের মুখে কালি ছুড়ছেন মনোজ শর্মা নামের একজন। তার কিছুদিন পরেই ভারতের আম আদমি পার্টির সিনিয়র নেতা যোগেন্দ্র যাদবের মুখে কালি ছিটিয়েছে এক যুবক। দু'জনেই প্রতিবাদ জানাতে এমনটি ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে একই রকমের প্রতিবাদের মনোস্তাত্তি্বক ব্যাখ্যা কী হবে?

ভবনের দেয়ালের ফাটল ধরার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গেল, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে একই রকম খবর আসছে। এর বেশ কিছু সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিতও হয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী এমন হবে যে, একই সময়ে সবাই দেয়ালের ফাটল ধরা নিয়ে অধিকতর সচেতন হয়েছে? 

No comments

Theme images by sololos. Powered by Blogger.